সাল ১৯৭২ তারিখ ১৩ অক্টোবর, উরুগুয়ের ওল্ড খ্রীষ্টান রাগবি দলের সদস্যরা তাদের পরিবারের ও বন্ধুদের সাথে উরুগুয়ে এয়ার ফোর্সের বিমানে করে চিলির স্যান্টিয়াগোতে একটি প্রদর্শনি ম্যাচ খেলতে যাচ্ছিল। বিমানে মোট ৪৫ জন যাত্রী ছিল।
বিমান ছাড়ার কিছুক্ষন পরই আওবহাওয়ার হঠাত পরিবর্তন হতে শুরু করে। বিমানটি মেঘের মধ্যে দিয়ে যেতে থাকে। তখন বিমান টি যাচ্ছিল আন্দিজ পর্বতমালার উপর দিয়ে। বিমান চালকেরা উচ্চতা বুঝতে পারেননি বিমানের পিছনের অংশটি সোজা পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর সামনের অংশটি বেশ কিছুটা দূরে গিয়ে পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে আছড়ে পরে ১৪০০০ ফিট উচ্চতায়।এই দুর্ঘটনার সাথে সাথেই ১৮ জন মারা যান। বেঁচে রইলেন বাকি ২৭ জন। তাদের মধ্যে ২ জন ডাক্তারি পড়ছিলেন। তার মধ্যে একজন রাগবি দলের অধিনায়ক রবার্তো ক্যানেসা। তারা বাকিদের চিকিতসা শুরু করেন।
উরুগুয়ে সরকার তাদের উদ্ধার করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু ১৪০০০ উচ্চতায় ঠান্ডায়, সাদা বরফে ঢাকা পাহাড়ে সাদা বিমান তারা কেউ খুজে পাননি। তাই ১০ দিন পর তারা উদ্ধার কার্য বন্ধ করে দেন কারণ ১৪০০০ ফুট উচ্চতায় জল ও খাবার ছাড়া ১০ দিন কারো পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
কিন্তু বাকি ২৭ জনের কি হল? তারা তখন লড়াই করছিল বেঁচে থাকার জন্য। দুর্ঘটনার পরের দিনই আরো একজন মারা যান। এই উচ্চতায় ও ঠান্ডায় কোনো প্রানী তো দুরের কথা কোনো উদ্ভিদও বেঁচে থাকতে পারেনা। তাই বেঁচে থাকা খবার অল্প অল্প করে খেয়ে যাই হোক করে বেঁচে ছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর তাও শেষ। এর মধ্যে শেষ হয়ে আরো কিছু জীবন। এর পর আর পথ না পেয়ে তার নিজেদের মৃত সহযাত্রীর মাংস খেতে শুরু করে। যা আমরা ভাবতেও পারিনা, তাই তাদের করতে হয়েছিল শুধু বেঁচে থাকা জন্য। এর মধ্যে হঠাত এক রাত্রে পাহারে নামল ধস, মারা গেলেন আরো কয়েক জন যাত্রী। বেঁচে রইলেন মাত্র ১৬ জন। এইভাবে কেটে গেছে প্রায় ২ মাস।
এদের মধ্যেই ২ জন যাত্রী ছিলেন নান্দো প্যারেডো আর রাগবি দলের অধিনায়ক রবার্তো ক্যানেসা। এইভাবে চলতে থাকলে মৃত্যু নিশ্চিত তাই তারা ঠিক করেন পায়ে হেটে এই বিশাল আন্দিজ পর্বত মালা পার হবেন। না তাদের ছিল উপযুক্ত খাদ্য, জল না ছিল ট্রেক করার কোনো সরঞ্জাম। তার ছিলেন খেলোয়াড় , আর খালোয়াড় সুলভ হার না মানা মানসিকতার জোরেই তারা এগিয়ে চলেছিলেন। এই ভাবে ১২ দিন হাঁটার পর তারা চিলির এক লোকালয় পৌঁছান । তারপর বাকিদের জন্য উদ্ধারকার্য আবার শুরু হয়। বেঁচে যান বাকি ১৪ জনও।
রাগবি দলের অধিনায়ক রবার্তো ক্যানেসা এখন পেশাদার চিকিৎসক। আর দুর্ঘটনায় নিজের মা ও বোনকে হারানো নান্দো প্যারেডো এখন টেলিভিশন সঞ্চালক। ১৯৭৪ সালে এই ঘটনা নিয়ে পিয়ার্স পল রিড এলাইভ (Alive) নামে একটি বই লিখেছেন যেটা নিয়ে ১৯৯৩ সালে একটি সিনেমা বানিয়েছেন ফ্র্যাঙ্ক মার্শাল। আর রবার্তো ক্যানেসা ও পাবলো ভিয়েরচি ও এই ঘটনা নিয়ে একটি বই লিখেছেন যার নাম আই হ্যাড টু সারভাইভ ( I Had to Survive)।