গল পিটার্স এর মানচিত্র, নামটা শুনে ভাবছেন এটা আবার কি? এবার যদি বলি গ্রীনল্যন্ড আর আফ্রিকার আকার মানচিত্রে একরকম লাগলেও আফ্রিকা গ্রীনল্যন্ডের থেকে ১৪ গুন বড়। আমেরিকা, ভারত ও চীন এর মিলিত আকার প্রায় আফ্রিকার সমান। ভাবতেই কেমন লাগছে তো? পুরো ব্যাপারটা খুলে বলা যাক।
আমরা যে মানচিত্র এখন ব্যাবহার করে থাকি তার নাম হল মারকেটরের মানচিত্র বা মারকেটর প্রোজেকশন। প্রোজেকশন ব্যাপারটা আগে জেনে নেওয়া যাক। যদিও পৃথিবী পুরোপু্রি গোলাকার নয়, কিন্ত আমরা যে মানচিত্র ব্যাবহার করে থাকি তা পৃথিবী গোল ভেবেই তৈরি করা। তাই এই মানচিত্র পুরোপুরি সঠিক নয়। একটা ফুটবলকে কাটলে যেমন কোনোদিন যেমন চৌকো সমান্তরাল আকার দেওয়া যায়না। পৃথিবীর মানচিত্রের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একইরকম। এবার যেনে নেওয়া যাক গোলাকার পৃথিবীকে কি করে সমান্তরাল আকার দেওয়া গেল।
পৃথিবীর উপর নিচের ছবির মত অনেক গুলো গোলাকার বৃত্ত দিয়ে ঢেকে তাকে সমান্তরাল করা হয় তাহলে
মারকেটরের মানচিত্র অনুযায়ি অনেকটা এরকম দেখতে হবে
আর গল পিটার্স এর মানচিত্র অনুযায়ি অনেকটা এরকম দেখতে হবে
মারকেটরের মানচিত্র
গোলাকার পৃথিবীকে একটি চোঙ এর মধ্যে রেখে তার কিছু বিশেষ যায়গা থেকে চোঙ এর দুরত্ব মাপার পর সেই চোঙ কে সমান্তরাল আকার দিলে যে ছবি পাওয়া যায় সেটাই হল মারকেটর প্রোজেকশন। এবার প্রশ্ন সবই যদি ভুল হয় তাহলে এর গুরুত্ব কোথায়। এই মানচিত্রের সাহায্যে কোনো যায়গার দুরত্ব মাপতে সুবিধা হয়, এর সাহায্যে ন্যূনতম দুরত্ব মাপা না গেলেও সবথেকে সহজ রাস্তা খোঁজা সম্ভব।
ফ্লেনডার্সের ( যেটি বর্তমানে বেলজিয়ামে অবস্থিত) জেরারদাস মারকেটর এই মানচিত্র তৈরি করেছিলেন ১৫৬৩ সালে। তখন আন্টার্টিকাও আবিষ্কার হয়নি। সেই সময় নাবিকরা তার তৈরি মানচিত্র ব্যবহার করতেন সমুদ্র যাত্রার জন্য। এখনও দৈনন্দিন কাজের জন্য এই মানচিত্রই ব্যবহার করে থাকি।
গল পিটার্স এর মানচিত্র
এবার আসি গল পিটার্সের মানচিত্রের কথায়। এই মানচিত্র তৈরি করেছিলেন জেমস গল নামে এক মানচিত্রাঙ্কনবিদ। ১৮৫৫ সালে একটি বিজ্ঞান সম্মেলনে এই মানচিত্র তিনি সবার সামনে নিয়ে আসেন। পরে এটি নিয়ে একটি প্রবন্ধও প্রকাশ করা হয়েছিল।
এরপর কেটে গেছে আরো ১১৮ বছর। ১৯৭৩ সালে এক আরনো পিটার্স নামে এক জার্মান চলচিত্রকার একটি মানচিত্র সবার সামনে নিয়ে আসেন। এই নিয়ে অনেক বিতর্কেরও সৃষ্টি হয়। কারণ এই মানচিত্রে সব হিসেবই পাল্টে যায়।
তাই এই মানচিত্রের নাম হয় গল পিটার্সের মানচিত্র। “গল – পিটারস প্রজেকশন” নামটি মনে হয় আমেরিকান কার্টোগ্রাফিক অ্যাসোসিয়েশন ১৯৮6 সালে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় আর্থার এইচ রবিনসন প্রথম ব্যবহার করেছিলেন।