আমাদের রোজকার ব্যস্ত জীবন, কাজের চাপ, মানসিক চাপ নানা কারনে আমরা আজকাল সুস্থ জীবন যাপন করতে পারিনা। সেই কারনে হতে থাকে ওজন বৃদ্ধি তার সাথে ডায়াবেটিস, হৃদ রোগের সমস্যা আরো নানা রোগ আমাদের শরীরে বাসা বাধে।
এই সব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে হলে আপনাদের জীবনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন প্রতিদিন কিছু সময় ব্যায়াম করা, নিজের খাওয়া দাওয়ার উপর নজর রাখা ইত্যাদি। আপনার শরীর কেমন হবে তা প্রায় ৮০% নির্ভর করে আপনার খাদ্যাভাসের উপর। ভাল খাদ্যাভাস মানে শুধু কি খাচ্ছেন নয়, কি খাচ্ছেন, কতটা খাচ্ছেন , আর কখন খাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে। কি আর কতটা নিয়ে অন্য কোনো লেখায় আলোচনা করা যাবে। এই লেখায় আমরা আলোচনা করব কখন খাবেন তা নিয়ে, আর এখানেই আসে সবিরাম উপবাস বা Intermittent Fasting কথা।
এর জন্য আপনাকে সপ্তাহে ২/৩ দিন ১২-১৬ ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হবে আর খাবার খেতে হবে বাকি ৮ ঘন্টার মধ্যে। এই ১২-১৬ ঘন্টার মধ্যে আপনি আপনি শুধু জল খেত পারেন কিমবা চিনি ছাড়া ব্ল্যাক কফি বা গ্রীন টি চলতে পারে। এছাড়াও ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং আরো অনেক ভাবে করা যায়, অনেকে ১৮ ঘন্টা না খেয়ে থাকেন আবার কেউ ২৪ ঘন্টা । তবে সেটা নিজের
শরীর বুঝে করাই ভাল। বিভিন্ন ধর্মে অনেকক্ষন না খেয়ে অনেক রীতি মেনে চলার প্রথা আছে, তার পিছনে বিজ্ঞান কিন্তু এইটাই।
সবিরাম উপবাস (integrmittent fasting) কিভাবে কাজ করে
হিউম্যান গ্রোথ হরমোনের (HGH) লেভেল বৃদ্ধি করে
আমাদের যখন বয়স কম থাকে তখন আমাদের হিউম্যান গ্রোথ হরমোন সব থেকে বেশি থাকে।সেই কারনে তখন জাঙ্ক ফূদ খেলেও আমাদের শ্রীরে তার খারাপ প্রভাব খুব একটা পড়তনা। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে হিউম্যান গ্রোথ হরমোন কমতে থাকে । হিউম্যান গ্রোথ হরমোন আমাদের শরীরে নিঃসরণ হয় রাত্রি বেলাআমরা যখন ঘূমিয়ে থাকি। আম্রঅরা যখনই কোন খাবার খাই তা আমাদের হিউম্যান গ্রোথ হরমোন নিঃসরণকে আটকায় । আতি আমরা জদি ১২-১৬ ঘন্টা না খেয়ে থাকি তখন আমাদের শরীর একটা ধাক্কা খায়। তা সামলানোর জন্য আমদের শরীর থেকে হিউম্যান গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ হয়।
আমাদের ইনসুলিন সেনসেটভিটি বৃদ্ধি করে
ইনসুলিন সেনসেটভিটি বাড়ানো আর ইনসুলিনের লেভেল বাড়ানো কিন্তু একজিনিস নয়। ইনসুলিন সেনসেটভিটি হল একটা কাজ করতে আমাদের শরীরের যে পরিমান ইনসুলিন খরচ হয় তার পরিমান।
বিপাক ক্রিয়া বা মেটাবলিসম বৃদ্ধি করে
সহজ ভাষায় বলতে গেলে আমরা যে খাবার খাই তার থেকে আমাদের শরীর কতটা পুষ্টি পাবে তা নির্ভর করে মেটাবলিসমের উপর। অনেক কে দেখে থাকবেন অনেক বেশি খবার ফলেও তাদের চেহারা সুন্দর থাকে। আবার অনেকে তেমন কিছুই খায়না কিন্তু চেহার ভারী হতে থাকে। এটা মেটাবলিসমের তারতম্যের জন্য হয়।
সবিরাম উপবাস (intermittent fasting) করার উপকারিতাঃ
স্থুলতা কমায়
রক্তে শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে রাখে
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে
ওজন কমায়
মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে
রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ায়
কর্কট রোগ (Cancer) প্রতিরোধ করে
আলজাইমার প্রতিরোধ করে
ঘুম ভাল হয়
মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়
কখন করবেন না?
অন্তঃসত্বা অবস্থায়
শিশু স্তন্যপান করলে
হৃদদরোগে আক্রান্ত হলে
মধুমেহ রোগে (Diabetes) আক্রান্ত হলে
স্বাভাবিকের তুলনায় ওজন কম হলে
নিম্ন রক্তচাপ থাকলে
কিশোর অবস্থায়
বয়স্ক মানুষেরা
এছাড়া শরীরে অন্য কোন রোগ থাকলে
সবিরাম উপবাস (intermittent fasting) শুরু করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে ভুলবেননা। শরিরে কোন রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভুলেও শুরু করবেন না, ফল মারাত্মক হতে পারে।
যখন সবিরাম উপবাস (intermittent fasting) করবেন পরিমিত জল খেতে ভুলবেন না। আর যদি কিছু খেতে ইচ্ছে করে তাহলে চিনি ছাড়া ব্ল্যাক কফি বা গ্রীন টি চলতে পারে এর বেশি আর কিছু না। আর ফাস্টিং শেষ হবার সাথে সাথে অতিরিক্ত ক্যালোরি যুক্ত খাবার। বা পরিমানে বেশি খেয়ে ফেলবেন না।
যদি কখনও মনে হয় আপনার শরীর খারাপ হচ্ছে আর ফাস্টিং নিতে পারছে না, সঙ্গে সঙ্গে ফাস্টিং ভেঙ্গে ফেলবেন। তাই আবার বলছি বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ছাড়া শুরু করবেন না।