বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ক্রিকেট মাঠে প্রযুক্তির ব্যবহার

ক্রিকেট মাঠে প্রযুক্তির ব্যবহারক্রিকেট মাঠে প্রযুক্তির ব্যবহার

কলমেঃ অরিন্দম রায়

ক্রিকেট মাঠে প্রযুক্তি

 

প্রযুক্তির ব্যাবহার বর্তমানে প্রত্যেকটি খেলার সাথে জড়িত। ক্রিকেটও তাঁর ব্যাতিক্রম না। আউট হওয়া থেকে বিভিন্ন দর্শনীয় গ্রাফিক্সের ব্যাবহার করে দর্শকদের অবাক করে দেওয়া বা স্লো- মোশনে খেলোয়াড়দের বিভিন্ন মজার অঙ্গভঙ্গি দেখান খুবই প্রচলিত আজকের যুগে। তা নিয়ে বিতর্কের ও শেষ নেই। একদলের বক্তব্য এটা আম্পায়ারের ক্ষমতা খর্ব করছে আরেক দলের মতে আম্পায়ারদের ভুলের মাসুল দল ভোগ করবে কেন? ভালো খারাপের বিতর্কে না ঢুকে দেখে নেওয়া যাক কি কি প্রযুক্তি ক্রিকেট মাঠে বর্তমানে ব্যাবহার হচ্ছে। 

স্নিকোমিটার

 

স্নিকোমিটার আসলে একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল মাইক্রোফোন যা স্ট্যাম্পের মধ্যে থাকে। এটি এতটাই কার্যকারি যে পারিপার্শ্বিক অন্যান্য শব্দের মধ্যে থেকে ব্যাট-প্যাড বা ব্যাট-বলের সংঘর্ষের শব্দকে আলাদা করে দিতে সক্ষম। স্নিকোমিটারে ধরা পড়া ব্যাট-বলের (ক) ব্যাট-প্যাড (খ) ও সংঘর্ষের ফলে বেরনো শব্দ নিচের ছবি দুটিতে দেখান হয়েছে। যদি ব্যাট বলের সাথে ধাক্কা খায় তবে ব্যাটের কাঠ ও বলের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে খুব অল্প সময়ের জন্যে পরিস্কার একটি পিক লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু যদি ব্যাট প্যাডের সাথে বা বল গ্লাভসের সাথে ধাক্কা খায় তবে অনেক জোরে এবং অনেক বেশি সময়ের জন্য শব্দটি স্থায়ী হয়।

সময়ের এই পার্থক্য আমাদের কান বুঝতে অক্ষম হলেও স্লোমোসান ক্যামেরা এবং স্নিকোমিটার একসাথে চালিয়ে খুব সহজেই বোঝা যায়। স্নিকোমিটার আমাদের সংঘর্ষের ছবি দেখায়। কিন্তু সেই সংঘর্ষ ব্যাট-বল , ব্যাট-প্যাড নাকি ব্যাট মাটিতে লাগার ফলে হয়েছে সেটা ঠিক করেন আম্পায়ারই। অনেক সময় একাধিক শব্দ একসাথে ধরা পড়লে অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়ে তাদের আলাদা করা। তাই বর্তমানে স্নিকোমিটারের ব্যাবহার বন্ধ করে “হটস্পট” প্রযুক্তির ব্যাবহার করা হচ্ছে।

স্নিকোমিটার

 

হটস্পট

উষ্ণতা আছে এরকম যেকোনো বস্তু থেকেই ইনফ্রারেড বা অতি-লোহিত বিকিরন বের হয়। বিকিরনের তীব্রতা সেই বস্স্তুটির উষ্ণতার চতুর্থ গুনকের সাথে সমানুপাতি। অর্থাৎ বেশি উষ্ণ বস্তু বেশি পরিমানে ইনফ্রারেড রশ্মি বিকিরিত করবে। এই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে “হটস্পট” প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হয়। ক্রিকেট পিচের দুপাশে পরস্পরের উল্টোদিকে দুটি ইনফ্রারেড ক্যামেরা লাগানো হয়। ব্যাট এবং বলের সংঘর্ষে ঘর্ষণের ফলে সংঘর্ষের জায়গাটি পারিপার্শ্বিকের তুলনায় সামান্য বেশি উষ্ণ হবে। সেখান থেকে অধিক ইনফ্রারেড বিকিরনের ফলে জায়গাটি সাদা দেখাবে। যদি বল ব্যাটে লেগে প্যাডে লাগে তাহলে দুটি সাদা স্পট দেখা যাবে। স্লো-মোসান ক্যামেরার সাহায্যে কোন স্পটটি আগে তৈরি হয়েছে সেটা দেখে অনায়াসে বোঝা সম্ভব আউট হয়েছে নাকি হয় নি। হটস্পট দিয়ে ব্যাটের কানায় বল লেগে উইকেট –কিপারের হাতে গেছে কিনা অথবা বল ব্যাটের ঠিক কোন জায়গায় লেগেছে তাও বোঝা সম্ভব।

হটস্পট

 

হক আই

 

ক্রিকেট ছাড়াও হক আই ফুটবল গোললাইন অতিক্রম করেছে কিনা বা টেনিস বল বা ব্যাডমিন্টন শাটল লাইনের বাইরে না ভেতরে পড়েছে কিনা দেখতে ব্যাবহার করা হয়। ক্রিকেটে এল.বি.ডাবলু সংক্রান্ত সমস্যায় হক আই এর সাফল্য ঈর্ষনীয়।

বলের সঠিক গতিপথ নির্ধারণের জন্যে মাঠের মধ্যে ছটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা ব্যাবহার করা হয়। এই ক্যামেরা গুলো মিলিত ভাভে বোলারের হাত থেকে বল ছাড়া থেকে বলটি ডেড হওয়া অব্দি বলটিকে লক্ষ্য করে। সবকটি ক্যামেরা থেকে পাওয়া ছবিগুলিকে উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন কমপিউটারের সাহায্যে বিশ্লেষণ করে বলটির গতিপথের ত্রিমাত্রিক চিত্র বানানো হয়। এল.বি.ডাবলু এর ক্ষেত্রে দেখা হয় কোথায় বলটি যেতে পারত যদি প্যাডে না লাগত। এই কাল্পনিক সম্ভাব্য গতিপথ নির্ধারণ করার জন্যে প্রথমে বেশকিছু তথ্য ক্যামেরা থেকে পাওয়া যায়। যেমন বলটির গতিবেগ, বলটির সুইং, কতটা বাউন্স করেছে এবং ড্রপ খাওয়ার পর উইকেট থেকে কতটা দূরে সরে গেছে। এই সব তথ্য মিলিত ভাবে বেশকিছু সমীকরণের সমাধানে সাহায্য করে যা থেকে বলটির পরবর্তী কাল্পনিক গতিপথের হৃদিস পাওয়া যায়। হকআই আরও এল.বি.ডাবলু ছাড়াও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে সাহায্য করে। যেমন ওয়াগন হুইল (মাঠের কোন প্রান্ত থেকে কত রান নিয়েছে ব্যাটসম্যান), পিচ-ম্যাপ (বোলার পিচের কোন জায়গায় বেশি বল ফেলছে), রিয়াকসান টাইম (কতক্ষণ সময় লাগল ক্যাচ ধরতে) ইত্যাদি।

হক আই

বোলিং স্পিড ট্র্যাকার

 

একজন বোলার বল করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমরা জানতে পারি একজন বোলার কত গতিতে বল করেছে। বলের গতি মাপার ব্যভার করা হয় স্পিড গানের। আমরা অনেকেই দেখেছি রাস্তায় আমাদের গাড়ির গতি মাপার জন্য স্পিড গানের ব্যভার করা হয়ে থাকে। ক্রিকেটের মাঠেও একই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। যে কোন এক দিকার সাইট স্ক্রিনে এই স্পিড গান লাগানো থাকে।

এই স্পিড গানে লাগানো থাকে একটি ট্রান্সমিটার অ একটি রিসিভার। স্পিড গান থেকে ছাড়া মাইক্রোওয়েভ বোলারের হাত থেকে বল ছাড়ার পর বলে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে। সেখান থেকে ফ্রিকুয়েন্সির তারতম্য দেখে মাপা হয় বলের গতি কত ছিল। তবে এই ক্ষেত্রে বলারের হাত থেকে বল বেরোবার পরের গতিটি মাপা হয়। ব্যাটস্ম্যানের কাছে বল পৌঁছোতে পৌঁছোতে বলে গতি সামান্য কমে যায়।

জানা অজানা তথ্য

Leave a Reply