হেঁশেলের খবর

 ঝালমুড়ি এক্সপ্রেস : লন্ডনে এক টুকরো কলকাতা

ঝালমুড়ি এক্সপ্রেস : লন্ডনে এক টুকরো কলকাতা ঝালমুড়ি এক্সপ্রেস : লন্ডনে এক টুকরো কলকাতা

 

ঝালমুড়ি নামটা শুনলেই বাঙালির প্রথম যে শহরটার কথা মাথায় আসে তা হলো– কলকাতা। মুড়ির সঙ্গে চানাচুর, বাদাম, ছোলা ভেজানো, শশা, পেঁয়াজ কুচি, কয়েক কিসিমের মশলা আর শেষে আচারের তেল দিয়ে মাখিয়ে টং টং ধাত্তেরেকেটে ক্রান…আহ! ভাবলেই কেমন মুখে জল চলে আসে, না? এবার যদি বলি আপনি লন্ডনের রাস্তায়ও এই ঝালমুড়ির স্বাদ পেতে পারেন, বিশ্বাস করবেন? অবাক হচ্ছেন তো, অবাক হবার মতোই কথা বটে। আর তাই দিল থামকে বৈঠিয়ে আজ এমন একজনের কথাই বলব, যিনি লন্ডনের রাস্তায় ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। খাবেন নাকি মুড়ি মিক্সচার?

সেটা ২০০৪- এর দুর্গাপুজোর সময়। এঙ্গাস ডেনন নামের এক ব্রিটিশ নাগরিক অস্ট্রেলিয়া থেকে ইংল্যান্ড ফেরার পথে কলকাতায় এসেছিলেন, না না বেড়াতে বা পুজো দেখতে নয়, কারণ সবথেকে সস্তার টিকিটের স্টপওভার ছিল আমাদের এই কলকাতা। সাহেব সেই সন্ধেতেই ট্রেন ধরে চলে যান দার্জিলিং। আহা পুজোর প্যাচপ্যাচে গরমের থেকে সাহেবের মনেহয় ঠাণ্ডাই বেশি মনে ধরেছিল, অবশ্য “হতিই পারে, সায়েব বলে কতা!”

মানুষ যা ভাবে, সবসময় তাই করে এমন তো নয়, সাহেবেরও ঠিক তাই হলো, কলকাতাতে কিছুটা সময় কাটানোর পর তার এই শহর সম্বন্ধে ধারনা পাল্টে যেতে শুরু করে, কারন পশ্চিমি দেশে দেখা ভারতের ছবির সাথে চর্মচক্ষে দেখা শহরের কোনো মিল নেই। কিছুটা সেইজন্য আর কিছুটা খিদের তাগিদে রাস্তার ধারের খাবারের দোকানগুলো তাঁকে আকৃষ্ট করেছিল। চমৎকার স্বাদ, সাহেব ঠিক করে নেন তিনি পরের বছর আবার কলকাতা আসবেন কেবল রাস্তার ধারের খাবারের স্বাদ নিতে, আর এরমধ্যে ভেবে নিতে হবে এই রাস্তার খাবারের ওপর একটা ছবি বানানো যায় কিনা! দার্জিলিং ঘুরে, সাহেব সেবার বাড়ি ফিরে গেলেন।

বছর কাটলো, যেমন ভাবনা তেমন কাজ। এবার তিনি নেপাল ছুঁয়ে এলেন কলকাতায়। এবার কিন্তু আর একবেলা নয়, এ শহরের মায়ায় তিনি কাটিয়ে ফেললেন পুরো তিন-তিনটে মাস। নেপাল থেকে কেনা ক্যামেরা দিয়ে শুট করতে শুরু করলেন শহরের স্ট্রিটফুডের। এরকম একদিন শুট করতে করতে সাহেব মির্জা গালিব স্ট্রিটের কাছে একজনকে দেখে তাজ্জব বনে যান। রঙচঙে স্টল, আর ঝালমুড়ি বানানোর ধরন সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষন করে। ব্যাস আর কী সাহেব শুটিং থামিয়ে ঝালমুড়ির শিক্ষার্থী হয়ে গেলেন এরপর, শিখেও নিলেন টং টং ধাত্তেরেকেটে ক্রান।

এরপর আরও বেশকিছুদিন কেটেছে, সাহেব দেশে ফিরেছেন। ইন্ডিয়া ট্যুরের বর্ণনা দিতে দিতে সাহেব তাঁর সেখানকার ফিল্মমেকার বন্ধুদের তাঁর তোলা ভিডিও দেখান এবং জানান যে ঝালমুড়ি তৈরি তিনি শিখে এসেছেন।এই আড্ডার মধ্যে একজন ছিলেন স্ট্রিট ফুড নিয়ে ডকুমেন্টারি বানাচ্ছিলেন, তিনি ঠিক করেন এঙ্গাস ডেননের ঝালমুড়ি বানানো শুট করবেন। করলেনও, কিন্তু যতটা জনপ্রিয়তা আশা করেছিলেন পরিচালক মহোদয় তার ছিটেফোঁটাও হলোনা, সেভাবে কোনো ইমপ্যাক্টও হলোনা। পরিচালক স্পষ্টতই হতাশ। কিন্তু ডেনন ততদিনে মনস্থির করেই নিয়েছেন– এবার থেকে তিনি ঝালমুড়িই বানাবেন।

ব্যাস ছোট্ট একটা গাড়ি সাজিয়ে গুছিয়ে তিনি শুরু করলেন ঝালমুড়ি বিক্রি করা। এ গাড়ি কিন্তু আমাদের শহরের ঝালমুড়ির স্টলের মানিকজোড়। জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মির্জা গালিব স্ট্রিটের এই ঝালমুড়ির ছাত্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসাও বেড়েছে ডেনন দা-র, ছোট গাড়ির জায়গায় এসেছে বড় গাড়ি, কেবল ঝালমুড়ি নয় এ গাড়িতে পাওয়া যায় আরও অনেকরকমের স্ট্রিট ফুড। কী খেতে ইচ্ছে করছে তো, তারজন্যও চিন্তা নেই ইংল্যান্ডে ভারতীয় দের নানা অনুষ্ঠানে নিজের স্টল দেন ডেনন। তেমন একটায় যাবার সুযোগ পেলেই আপনার হাতে ঠোঙা ধরাতে হাজির হবেন এঙ্গাস ডেনন থুড়ি বাঙালির ডেনন দা।

জানা অজানা তথ্য

Leave a Reply