নোবেল প্রাইজের কথা তো সবারই জানা। প্রত্যেক বছর অক্টোবর মাসে হওয়া এই অনুষ্ঠানের দিকে গোটা বিশ্ব তাকিয়ে থাকে। কিন্তু তাঁর ঠিক আগের মাসে হওয়া ইগ-নোবেল প্রাইজের কথা জানে এমন মানুষ হাতে গোনা। আক্ষরিক অর্থে ইগ-নোবেল কথাটির মানে এমন এক কৃতিত্ব যা কিনা মূল্যহীন, ভিত্তিহীন বা কিংভুতকিমাকার। শুরু হয়েছিল সেই ১৯৯১ এ। দ্বিমাসিক বিজ্ঞান পত্রিকা “অ্যানালস অফ ইম্প্রব্যাল রিসার্চ” এর হাত ধরে। নোবেল প্রাইজের মত বিজ্ঞানের পাঁচটি শাখা ছাড়াও ইঞ্জিনিয়ারিং, আন্ত-বিষয়ক বিজ্ঞান, জনস্বাস্থ্য ইত্যাদি আরো পাঁচটি নতুন শাখা নিয়ে।বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক পত্রিকা নেচারের মতে “ইগ-নোবেল এমন একটা পুরস্কার যা পুরস্কারমুল্য দিয়ে বিচার করা উচিৎ না। সেই সব গবেষণাকে সন্মান দেওয়া হয় যা প্রথমে হাসায় পরে ভাবায়”। কীরকম হাসায় সেটা জানতে হলে এবছরের বায়োলজিতে ইগ-নোবেল প্রাপক জ্যুরিখ ইউনিভার্সিটির আলেক্স সুয়ারেজ এবং মিলো পুহানের কথা বলতে হয়। তাদের ইগ নোবেল পাওয়ার কারন তাঁরা অস্ট্রেলিয়ার এক ধরনের বাঁশি দিয়ে নাক ডাকার চিকিৎসা করেছেন। ফিজিক্সের বিজয়ী মার্ক ফারদিনের আবার গবেষণার বিষয় বিড়াল কি একই সাথে কঠিন এবং তরল পদার্থ? তাঁর মতে বিড়াল তরল কারন বিড়ালকে স্নান করার মগে রেখে দেওয়া যায় (যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের আকার ধারন করে) আবার কঠিন কারন জলে চুবিয়ে দিলে বেড়ালের শরীর শক্ত হয়ে যায়।
মজার আড়ালে বিজ্ঞান
এরকম বেশ মজার মজার পুরস্কার দেওয়া হয় ইগ-নোবেলে। ২০১৩ তে শান্তিতে ইগ নোবেল প্রাপক বেলারুসের রাষ্ট্রপতির কৃতিত্ব ছিল প্রকাস্যে হাততালি দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা। কেরালা কৃষিবিজ্ঞান ইউনিভার্সিটির দুই প্রফেসর স্রিকুমার এবং নিরমালন ২০১৩ সালে ভারতীয় হাতির উপরিভাগের ক্ষেত্রফল নির্ধারণের জন্যে গনিতে ইগ-নোবেল পান। ফিজিক্সে এই পুরস্কার প্রাপক দুই অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানি অঙ্ক কষে বের করেন একটি ভেড়াকে বিভিন্ন অসমতল জায়গার ওপর দিয়ে তেনে নিয়ে যেতে কত শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। নিউক্যাসেল ইউনিভার্সিটির ক্যাথেরিন ডগলাস, পিটার রোলিংসনের সাথে কাজ করে প্রমান করেন নামওয়ালা গরুরা নামবিহীন গরুর থেকে বেশি দুধ দেয়।২০১৪ তে ফিজিক্সে ইগ-নোবেল দেওয়া হয় কলার খোসায় পা পিছলে যাওয়ার জন্য ঘর্ষণ বল বের করার জন্য।
যেকোনো আবিষ্কার হাসির উদ্রেক করতেই পারে কিন্তু তারমানে এই নয় যে তাতে বুদ্ধিদিপ্ততার অভাব রয়েছে। বিজ্ঞান মানে নতুন কিছুর খোঁজ। দৈনন্দিন জীবনের অনেক ঘটনাই “এতো হতেই পারে” বলে আমরা পাস কাটিয়ে চলে যাই। কিন্তু বিজ্ঞান সম্মতভাবে সেই “হতেই পারে” ঘটনা গুলোকে পর্যবেক্ষণ করলে অনেক সময়ই নতুনকিছু বেরিয়ে আসে যা অত্যন্ত মজাদার। আর সেই বৈজ্ঞানিকদেরই কুর্নিশ জানায় ইগ-নোবেল।
প্রাপক | সাল | বিভাগ | অবদান | অনুসন্ধানের কারন |
রবার্ট লোপেজ | ১৯৯৪ | পতঙ্গবিদ্যা | বিড়ালের কানের পতঙ্গ মানুষের কানে বাসা বাঁধতে সক্ষম | বাচ্চাদের বিড়ালের সংস্পর্শে ইনফেকশন হতে পারে। |
ট্রয় হারটুবিস | ১৯৯৮ | ইঞ্জিনিয়ারিং | আক্রমন প্রতিরোধকারি বর্ম। | ভালুকের আক্রমন থেকে বাঁচা। |
আন্দ্রে জেম | ২০০০ | ফিজিক্স | একটি ব্যাঙকে শূন্যে ভাসিয়ে রাখার জন্য | জলের চুম্বকীয় ধর্ম পরীক্ষা। |
ব্রিটিশ নেভি | ২০০০ | শান্তি | কামানের গোলা ব্যাবহার না করে মুখে শব্দ করা | সরকার সৈনিকদের জন্য বরাদ্দ অর্থ কমানোর প্রতিবাদে। |
শেষ করব এক মজার ঘটনা দিয়ে। উত্তরপ্রদেশের লাল বিহারি নামের এক চাষি ১৯৭৫ সালে সরকারি অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তিনি মৃত। তাঁর কাকা সম্পত্তির লোভে অফিসে ঘুষ দিয়ে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেছেন। লাল বিহারি দেখলেন তাঁর আশেপাশে আরো অসংখ্য জীবিত লোক মৃত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের নিয়ে তিনি “মৃত সংঘ” স্থাপন করেন যার বর্তমানে সভ্য সংখ্যা প্রায় কুড়িহাজার। দীর্ঘ ১৯ বছর বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করে অবশেষে তিনি জীবিত বলে পরিচয় পান। এর মধ্যে নিজেকে জীবিত প্রমান করতে তিনি রাজিব গান্ধির বিরুদ্ধে ভোটেও দাঁড়ান। তাঁর এই লড়াইকে ২০০৩ সালে ইগ-নোবেল স্বীকৃতি দেয় এবং শান্তির জন্য পুরস্কারপ্রাপক হিসেবে ঘোষণা করেন। সেখানেও বিপত্তি! বহুকষ্টে পাসপোর্ট বানিয়ে হার্ভার্ডে যাওয়ার মুখে আমেরিকান সরকার তাকে আটকে দেয়। অবশেষে ইগ-নোবেল আয়োজকরা ভারতে এসে তাকে সন্মানিত করেন।